বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিক্ষা-গবেষণায় নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে হবে: ড. ইউনূস শেরপুরে টিআরসি পদে লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে ৩ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী আটক নালিতাবাড়ীর সীমান্তে ৩৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকার মালামাল জব্দ জবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ জবি শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, আহত শতাধিক চট্টগ্রাম বন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা সৈয়দপুর রেল কারখানায়, আছে সংকট পটুয়াখালীতে বিভাগীয় পার্টনার প্রকল্পের আঞ্চলিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত বর্ডার পাড়ি দেয়া হলো না- মরার কোকিলার! কালিয়াকৈরে  আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক  সভা অনুষ্ঠিত
বিজ্ঞপ্তি
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
/ ৬ Time View
Update : বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

 অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফরে এসেছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ সফরকে ঘিরে চট্টগ্রামে সাজ সাজ রব পড়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনকে ঘিরে সমাবর্তী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধীজনের প্রাণের মেলা বসেছে।
শুরুতেই তিনি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ৫ নম্বর ইয়ার্ডে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দেন।

 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বহুদিন থেকে আসবো, সবার সঙ্গে দেখা করে অগ্রগতি জানবো তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার কাছে অপরিচিত জায়গা না। এখানে বড় হয়েছি। বরাবরই এত দুঃখ, এটার পরিবর্তন এত শ্লথ কেন। এটা আজকের প্রশ্ন নয়, চট্টগ্রামবাসী হিসেবে চলার পথে দেখেছি। ট্রেন মিস করে ফেলেছি। মাঝেমধ্যে লেখালেখি করেছি এটা নিয়ে। প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করছি, কীভাবে এটার পরিবর্তন করা যায়। একটা সত্যিকার বন্দর হিসেবে তৈরি করতে হবে। দুনিয়া আটকে নেই। দুনিয়া বহুদূর চলে যাচ্ছে। আমরা অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে থাকার জন্য দুঃখও খুব বেশি না কারও কাছে। বিরাট পরিবর্তন দরকার। পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে দিয়ে দিতে হবে। যেভাবেই হোক। সবাই চায় তার ভালো হোক। না বোঝার কারণে এসব কথা আসবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পাল্টাতে হবে। তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর ভরসা। এটা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন অধ্যায়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ পথ খুলতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। ছোট্ট হৃদপিণ্ড, তার মধ্যে রোগাক্রান্ত। রক্ত সঞ্চালন হবে না। বন্দর নামের হৃদপিণ্ড বিশ্বমানের হতে হবে। অর্থনীতি সচল হবে। সারা দেশের জিনিস এখান দিয়ে বিদেশে চলে যাবে। বন্দর আরও আছে। কিন্তু এখান থেকেই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রিত হবে। পৃথিবীর সেরা বন্দরগুলোকে ডাকা হয়েছে। এ হৃদপিণ্ড পরিবর্তন না করে দেশের অর্থনীতি পরিবর্তন হবে। নেপালের হৃদপিণ্ড নেই। আমাদের হৃদপিণ্ড দিয়ে তাদেরও চলতে হবে। তারাও লাভবান হবে আমরাও লাভবান হবো। এ হৃদপিণ্ড বাদ দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালন হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের মতো দেশে, একটা বন্দর কয়েকটা টার্মিনাল নিয়ে কথা বলছি। এ রকম ২০-৩০টা বন্দর টার্মিনাল অনেক দেশের আছে। আমাদের হৃদপিণ্ড দিয়ে রোগী বেশি দিন টিকবে না। কাজেই এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এটাই চ্যালেঞ্জ। ভারতে স্বাস্থ্যের জন্য দলে দলে যান না! নেতারা সিঙ্গাপুরে, ব্যাংককে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। বন্দর – এখানে কেউ আসতে পারবে না। আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। সেরা চিকিৎসক দিতে হবে। এ হৃদপিণ্ড ক্রমাগত শক্তিশালী ও বৃহত্তর হবে। আমাদের বড় ডাক্তার দিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য টাকা পয়সা খরচ হবে না। বিল্ড অপারেট ট্রান্সপার পদ্ধতিতে তোমরা বানাও অপারেট করো, আমাদের হস্তান্তর করো। দুনিয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান যখন বানাচ্ছে তাদের রোজগার করে টাকা তুলতে হবে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বানাবে। তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে। তারা যন্ত্র বানিয়ে দেবে তাদের মেয়াদ শেষে আমরা চালাবো। আমাদের টাকা লাগলো না। আমরা প্রযুক্তির শেষ মাথা থেকে শুরু করলাম।

যারা আসবে তারা কি লোকজন নিয়ে আসবে। বন্দর চালাতে হলে আমাদের লোকই চালাবে। আমাদের লোকদের শিখিয়ে দিলে খুব সহজে শিখে নেবে। বন্দর বড় হবে, ক্যাপাসিটি বড় হবে। আমি বলি, আজ সই করে দিলেও পাঁচ বছর লাগবে। ফুল স্পিডে কাজ শুরু হবে পাঁচ বছর পর। আমাদের লোকজন এর মধ্যে অভিজ্ঞ হবে। ২০৩১ সালে তারা কর্মক্ষম হলে ২০৩৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর নানা দেশে তারা যে বন্দর চালায় সেখানে বাংলাদেশিরা চালাবে। তাড়াতাড়ি বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের লোকদের। চাকরি কমবে নাকি চাকরি বাড়বে। আমরা বুঝতে পারি না কেন। মানুষ তার প্রয়োজনে এটা করবে। দরখাস্ত নিয়ে ঘুরতে হবে। যে জায়গা খালি হবে সেখানে বাংলাদেশিরা চাকরি পাবে। বিরাট সুযোগ আমাদের।

আগে জাহাজের নাবিক ছিল ফিলিপাইনের। এখন সবাই বাংলাদেশের। আমাদের ক্ষমতা আছে। পাশ কাটিয়ে চলে গেলে হবে না। বন্দর চেয়ারম্যানের পাশে আমরা দাঁড়াই। আমাদের বলেন, কী করতে চান। আমরা তার দলে শরিক হলাম। তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০৩৬ সালের অপেক্ষায় থাকলাম, যেদিন বিশ্বের বন্দরগুলো আমরাই চালাবো।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, দ্রুত চুক্তি সই করে ফেলতে পারি। কাজ শুরু করতে পারি। আর অপেক্ষার সুযোগ নেই। ডাক্তারদের হাতে ছেড়ে দিই। যাতে যেটুকু পেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো করতে পারি। যাতে বাংলাদেশিদের স্মরণ করে। সেই গোপন রহস্য উদঘাটন করতে পারি। চট্টগ্রাম সওদাগরদের শহর। নৌকা নিয়ে, পালতোলা জাহাজ নিয়ে কে কোথায় চলে যাবে। পর্তুগিজরা এসেছিল। আমিও দোকানে বসেছি। তারা দেশ বিদেশে যাবে ব্যবসা করবে। ছোটবেলায় দেখেছি জাহাজ বোঝাই ধান, চাল আসতো। আমাদের রক্ত হলো সওদাগরের রক্ত। এদের হাতে ছেড়ে দিলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে যাবে। আমাদের রক্তের ভেতরে আছে, ঐতিহ্যের ভেতরে আসে। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। বিশাল অর্থনীতি হবে যদি চট্টগ্রাম বন্দরের হৃদপিণ্ড বিশাল হবে। যেকোনো ব্যবসায়ী এসে এখানে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতবেগে পরিবর্তন হবে।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত  ও গর্বিত প্রধান উপদেষ্টা বন্দর পরিদর্শনে এসেছেন। যদিও উনার শৈশব থেকে বন্দরকে দেখেছেন। গত আট মাসে আমি বহুবার এখানে এসেছি। যখনি বন্দরের প্রকল্প নিয়ে গেছি প্রধান উপদেষ্টা একবাক্যে পাস করে দিয়েছেন। উনার মমত্ববোধ আছে বন্দর নিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বাড়ছে। আশাকরি প্রধান উপদেষ্টা আবার আসবেন, আমাদের সময় দেবেন। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, ছয় মাস পরে দেখবেন বন্দর অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। আলাদা পোর্ট রোড দরকার আলাদা। মাল্টি মডেল কমিউনিকেশন থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বহর এরপর সোজা চলে আসবে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। সেখানেই কোটি মানুষের স্বপ্ন কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল হস্তান্তর, মহানগরীর জলাবদ্ধতা সম্পর্কিত ব্রিফিং, অক্সিজেন টু হাটহাজারী সড়ক উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্রিফিং ও আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।

এরপর চবি সমাবর্তনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, চবির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি ও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অংশ নেবেন। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ডক্টর অব লেটারস (ডি-লিট) ডিগ্রি দেওয়া হবে এবারের সমাবর্তনে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সকাল ৯টা ২১ মিনিটে চট্টগ্রামে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ৯টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page